>

রত্নদীপা।

                        শেষ পাতা




 সন্দীপ আর আমি হাঁটছিলাম
এই সফরে আরও অনেকেই হাঁটছিল আমাদের আশেপাশে !
লাল চুড়িদার , খয়েরী প্যান্ট , সবুজ ঊরু সাইকেল ...
আর আমাদের গা ঘেঁসে হাঁটছিল কাকাতুয়া রঙের একটা ট্রেন
 আমি আর সন্দীপ হাঁটতে হাঁটতে গল্প করছিলাম হাসছিলাম
ট্রেনটা আমাদের কথা শুনছিল ... মুচকি ধোঁয়া ছুঁড়ে দিচ্ছিল কখনো ...
 কখনো বকবকম ... সাইরেন পড়া সারং ...
সন্দীপ বললো , দেখেছেন মিসেস ঘোষ , কি ভীষণ বাঁশী হয়ে আসছে চারদিক
 আজ মনে হচ্ছে খুব বৃন্দাবন ... বর্ষাদার কোনো রসিকবিল আসবে ...
 কোথায় যে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে আমাদের ... বলতে না বলতে ট্রেনটা দাঁড়িয়ে পড়েছে কাঁধ ঘেঁসে ...
ওমা , দেখি কি ভীষণ জোর বৃষ্টি , ট্রেনের কোমর অব্দি পৌঁছে গেছে ...
সকল শূন্য করে জোরো রুগীর তীব্র পারদ ............ কি দুর্দান্ত মাধবী এই তামাটে ক্ষণ
বৃষ্টির এই রঙটি আমার সব চাইতে বেশি পছন্দের
ইচ্ছে আছে , কখনো এই রঙের একটা শাড়ি বানাবো বৃষ্টিতে আঁকা হবে সেই শাড়ীটা
 আঁচলের দিকে দাঁড়িয়ে থাকবে এক জোড়া ময়ূর তারা প্রেমিক প্রেমিক হতে পারে
কর্তাগিন্নীও হতে পারে ... আই ডোন্ট মাইন্ড ...
শাড়িটার পাড়ের দিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে টেম্পল মেঘ ...
 মেঘ ডাকবে ঈশ্বরের জমিন ছুঁয়ে শাড়ীটা পড়ে একটুও ভয় পাবো না
 ছোটবেলার মতো মায়ের কোলে গিয়ে লুকিয়েও পড়বো না ...
 বরং আরও বেশি করে জড়িয়ে নেবো পেখমের বজ্র-বিদ্যুৎ ...
শাড়ীটাকে চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি যেন ...
নরম হাস্নুহানার গহনা ভেসে আসছে নাভিগৃহ থেকে ...
হাজার তারার জড়োয়া , কুচিময় হেমবর্ণ কল্পতরু ...
থরথর করে কেঁপে উঠছি জরির বিগ্রহে ...
চিৎকার করে উঠছি ...
আই অ্যাম ইন লাভ ...
আই অ্যাম ইন লাভ উইথ ডিজ রেইন ...
 সন্দীপবাবু ... শুনুন ... শুনুন ...
 অই বৃষ্টিটা একবার শুনুন মন দিয়ে ...
কি সাঙ্ঘাতিক অসহ্য ওর পারফিউম ...
 আমার জলস্তম্ভমাদলে একাকার করে দিয়েছে ওর স্টেমসেল ...
 কান্নার এনামেলে উপচে উঠছে ভুরু ...
 নিজেকে হারিয়ে ফেলছি এক পেয়ালা রূপোলী আফিমে ... নেশা নেশা ...
 সন্দীপবাবু ... বৃষ্টির নেশা ...
ফসফরাসের চাইতে কোনো অংশে কম শালিখ তো নয় ...
 সন্দীপ হাসছে ...
 আপনার মত মানুষ আমি এই প্রথম দেখছি মিসেস ঘোষ ...
 এই যে আজকের এই যাত্রায় কম করে হলেও হাজার মানুষ রয়েছেন ...
 আপনি একমাত্র যিনি আকাশের সরোবরে ভেসে গিয়ে ...
এমন দ্রুতলয়ে সারেগায় ডুবে উঠলেন ...
 তারপর দিগন্ত নিস্তব্ধ করে বেজে উঠলেন নিজস্ব ধানিসায় ....
.অদ্ভুত ... অদ্ভুত ... মিসেস ঘোষ , এমন শালপিয়াল আর ঢোলকের প্রত্যাবর্তন ...
 না , বলতেই হচ্ছে ... জুড়ি নেই আপনার ...
ভাঙা বৃষ্টির টুকরোগুলোকে অগোছালো রেগামায় গুছিয়ে নিচ্ছি ... ...
আমার কোনো সরগমই সত্যি নয়
আমার প্রতিটি পুকুর দীঘি , প্রতিটি পথ চাওয়া নদী ... বিষাদের সরু সরু মেহফিল ...
 আসমান ভেদ করে চাওয়া পাওয়ার জটিল বাদল ... সব মিথ্যে ...
এমনকি অই সাড়ে তিন অক্ষরের বৃষ্টি ... পাঁচ অক্ষরের ভালোবাসা
 অই দেবদারু মসলিনের শাড়ী মিথ্যে ... অই মরুভূমি সাজানো ক্যাকটাসের তসর ...
 জিভ ঠোঁট পারিজাত সব মিথ্যে ...
 মিথ্যের প্রজাপতিতে ভ্রমরের মৃত্যুও অবাক-সমান মিথ্যে ...
আরও অবাক গড়ে নিচ্ছে সন্দীপ ...
 আর আপনার নাম ?
 মিসেস ঘোষ ...
সত্যি কথা বলুনতো ... রত্নদীপা ...
 আপনার নামটি সত্যি না মিথ্যে ? ..
. ভিজে ভিজে মিথ্যে গায়ে দিয়ে হেসে উঠছি
সত্যিকারের হেসে উঠছি এই প্রথম ...
আমার নামটাও মিথ্যে
নামের তো কোনো নিজস্ব আয়না থাকে না ...
আকার থাকে না ... আদ্যক্ষর থাকে না যে পাত্রেই রাখো , আসল নাম কেউ কোনোদিন জানতে পারে না


Comments
0 Comments

No comments:

Blogger Widgets
Powered by Blogger.