>

জয়ন্ত ঘোষাল

SongSoptok | 4/10/2015 |




আমি হইতে আল্লা, রসুল আমি হইতে কূল।
পাগল হাসান রাজা বলে তাতে নাই ভুল।
আমি হইতে আসমান জমিন, আমি হইতে সব
আমি হইতে ত্রিজগত, আমি হইতে রব।
আক্কেল হইতে পয়দা হইল মাবুদ আল্লার
বিশ্বাসে করিল পয়দা রসুল আল্লার
মম আঁখি হইতে পয়দা  আশমান জমীন
কর্ণ হইতে পয়দা হইছে, মুসলমানী দীন
নাকে পয়দা করিয়াছে খুশবয় বদবয়,
আমি হইতে সব উৎপত্তি হাসান রাজায় কয়।
মরণ জীবন নাইরে আমার । ভাবিয়া দেখ ভাই
ঘর ভাঙ্গিয়া ঘর  বানানি, এই দেখতে পাই।
(হাসান রাজা)

মানুষ, নিছক  রক্ত মাংসের অস্তিত্ব নয় একটি বিশিষ্ট আইডিয়া। ঈশ্বরও একটা সুপ্রাচীন আইডিয়া। এই আইডিয়াগুলো নিছক ভাবনার কুস্তি নয় বরং জগতকে বুঝে নেওয়ার প্রাকৃত কৌশল। যতক্ষন একটা মানুষ নিছক রক্ত মাংসের বস্তু তখন তাকে বাজারে কাটা মুরগীর মত  অনায়াসে কেটে ফেলা  যায়, কিন্তু যে মুহুর্তে আমরা সেই সাযুজ্যে মানবিক আইডিয়াটাকে কোনো ব্যক্তির ওপরে আরোপ করি তখন তাকে হনন করা মুশকিল।আমরা অনেকেই  বাবার বয়সী রিক্সাওয়ালাকে তুইতোকারি করি কিন্তু বাবাকে করতে পারি না ।কারন বাবা একটা সম্পর্ক নির্ভর আইডিয়া। রিক্সাওয়ালা সেই আইডিয়ার মধ্যে পড়লে তাকেও সম্মান দিতাম। মানে আইডিয়াটাকে মেনে নিতাম।

ঈশ্বরের আইডিয়াকেও পৃথিবীর সমস্ত প্রজাতি চাক্ষুস কিংবা  ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য চেতনায় কোনোরকম ভাবে প্রমাণিত করার তাগিদ ছাড়াই মেনে নিয়েছে সেটা নিছক সংস্কার বা কুসংস্কার ভেবে নয়, বরং চৈতন্যের সার্বিক স্ফুরণের দাবীতে ঈশ্বর কতটা জাগতিক ভাবে প্রমাণিত হল সেটার থেকে এই আইডিয়াটা কতটা চৈতন্যকে   পরিণতি পেতে সহায়ক হল সেটাই মুখ্যত ঈশ্বরীয় ধারনার  মূলগত শক্তি।

অস্ট্রিক ও অন্যান্য আদিম প্রজাতির মানুষেরা প্রাচীন তত্ত্বগুলোর মাধ্যমে   সত্যের বিকাশকে ও তার  ভিন্ন ভিন্ন মাত্রাকে বুঝতে চেয়ে  আইডিয়াগুলোকে এই উপমহাদেশে সভ্যতার উষালগ্নে,বহু হাজার বছরে আগে গভীর মনোনিবেশে গড়ে তুলেছিল।

জাগতিক আবিষ্কার ও টেকনোলজি মূলত সেই বেসিক আইডিয়াগুলোকেই প্রমাণিত করতে চেয়ে ও ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য স্তরে তাদের বুঝতে চেয়ে যা যা করে চলেছে সেগুলো চৈতন্যকে সম্যক ধারনায় উপলব্ধির ক্ষেত্রে নতুন কিছু ধারনার জন্ম দিয়েছে বলা যাবে না ,যা বলা যাবে তা হল এইসব উদ্ভাবনগুলো  চৈতন্যের নানা মাত্রাকে নির্ধারণ করেছে ও কোথায় কোথায় তা বিশিষ্ট তাকে নির্দিষ্ট করেছে।

নানা সেমেটিক ও পারস্যের উপজাতিরা যখন প্রায় এক দেড় হাজার বছর ধরে  বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে এই উপমহাদেশের অস্ট্রিক উপজাতিদের মধ্যে মিশে যেতে লাগল তখন পুরোনো তত্ত্বগুলোর আরো অনেক দিক দেখা গেল। কিন্তু সেগুলো আদৌ নতুন আবিষ্কার তা বলা যাবে না। সেমেটিকদের শেষতম কলোনী যদি এই উপমহাদেশ হয় তবে আগের দেড় দুহাজার বছর আগে কেন তারা তত্ত্বগুলো আবিষ্কার করতে পারে নি? কারণ বুদ্ধি ও মেধার যে চর্চা দরকার ছিল বেসিক আইডিয়াগুলো তৈরীর নিমিত্তে সেগুলো তাদের করায়ত্ত ছিল না। বেদ বা রামায়ণ মহাভারতের মত এপিকগুলো তাই কিছুতেই তাদের কীর্তি এটা বলা যাবে না,বা সোজাসাপ্টা, এগুলো গোদা অর্থে আর্যদের ইম্পোর্ট করা প্যাকেজ বলাই যাবে না। বস্তুত  আর্য মানে  পারস্য থেকে আসা একদল জাতি, এটি বলা যায় না।  কোনোকালে ছিলা না। আর্য শব্দটা কোন জাতিকে বোঝায় না। আর্য শব্দটা ব্যাবহার করে কোন জাতিকে নির্দিষ্ট করাটা ছিল ম্যাক্সমুল্যারের ছলাকলা যদিও শেষ বয়সে তিনি সেটা লিখিত ভাবে স্বীকার করেন, এবং এটিকে জাতির পরিবর্তে ভাষা হিসেবে উল্লেখা করলেও  তাতে পৃথিবীব্যাপি শব্দটা নিয়ে যে মিথ্যা ধারনার মিথ তৈরী হয়েছিল সেই ড্যামেজ কন্ট্রোল করা যায় নি আজও।ডঃ ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত আর্য অর্থে কৃষকই ধরেছিলেন ঋকবেদেও এমন কতগুলি শ্লোক আছে যার মৌলিক অর্থ  কৃষক ছাড়া অন্য কিছু হতেই পারে না। যদিও এর বাইরেও আর্য শব্দের নানা প্রকার অর্থ করা হয়েছে।

“প্রাচীন আসিরীয় সভ্যতা ও বাঙলার আসুরী সভ্যতার মধ্যে সম্পর্কের দ্বিতীয় কারণ, বাঙলার দুর্গোৎসব ও মহিষাসুর বধের কাহিনী। এ বিষয়ে প্রথম দৃষ্টি আর্কষণ করেন স্বর্গত সুধাংশুকুমার রায় তাঁর “Ancient Egypt and pre-historic India”পুস্তকে ।তাঁর মতে , মহিষাসুরের ধারনায় মিশর ও বাঙলার উপাদান একত্রিত হয়ে আছে।খ্রিস্টজন্মের বহু পুর্বেই এ দেশে বিরাট এক সভ্যতা গড়ে উঠেছিল, যাতে যাযাবর আর্যদের কোন উপাদান ছিল না। ...মহিষাসুর তথা শ্রেষ্ঠ অসুর বা নেতা ছিলেন ব্রাহ্মণ্য সভ্যতা বিরোধী কোন রাজা বাঙলাকে কেন্দ্র করে তিনি পূর্বভারত স্বতন্ত্র রেখেছিলেন। তাঁর এতই প্রতাপ ছিল যে মিশ্রিত আর্য সভ্যতা পূর্বভারতে সহজে এগোতে পারেনি।ব্রাহ্মণ্য সমাজের প্রচারক ও প্রধানরা এই প্রবল শক্তিসম্পন্ন শাসনকর্তাকে পরাজিত করতে দীর্ঘ সময় নিয়েছিল। এবং যুদ্ধ পরিচালিত করেছিল দুর্গার নামে। দুর্গা মূলত বিদেশি দেবী। দুর্গাবিরোধী অসুর-রক্তের মানুষ যাতে দুর্গাকে সহজে স্বীকার করে নেয় । সেই জন্যেই পুরোহিত সমাজ দুর্গা, কালী ও চন্ডীকে একই শক্তি বলে কল্পনা করেছেন। বাঙালীও সম্পূর্ণ অপরিচিত জন্তুর সিঙ্ঘের পিঠে চেপে আসা “সিঙ্ঘিবাহনা’ দুর্গা সম্ভবত ব্যাবিলনের বিখ্যাত রণজয়ী(war-goddess) ননা। তাঁর সাহায্য পেলে যুদ্ধে জয় অবশ্যম্ভাবী।পার্গমনে দেবী রিয়া ও অ্যাথিনার দানবনিধনরত মূর্তি ননারই অনুরূপ এবং তাঁদের সেই ভয়ঙ্কর সিংহ আমাদের দুর্গাকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। অ্যাথিনার একাধিক মুর্তি পার্গমন থেকে পুর্ব বার্লিনের রাষ্ট্রীয় সংগ্রহশালায় রাখা আছে। “(আর্য রহস্য, সুহৃদকুমার ভৌমিক)।
মানব সমাজের বিশিষ্টতা এই যে, তার চেতনার বিবর্তন হয়ে চলেছে এবং ক্রমশ পরিণতির দিকে এগোচ্ছে। সেই পরিণতিকে ভাল মন্দের জাগতিক ধারনা দিয়ে বিচার করা চলা না। ধরা যাক একটি শিশু মাতৃজঠর থেকেই নিজের অজান্তেই নির্দিষ্ট পরিণতির দিকে এগোয়। সে প্রথমে শুয়ে থাকে, তারপর উলটে যায়, হামা দেয়, টলমল করে হাঁটে, দ্রুত হাঁটে, দৌড়ায়, তারপর ধীরে ধীরে জরায় আক্রান্ত হয়ে আবার নিশ্চল শুয়ে পড়ে –এটাই পরিণতি , কিন্তু তাবলে বৃদ্ধ শিশু হয়ে যায় না, বা তার এই পরিণতি ভাল মন্দের ধারনার  সঙ্গে সম্পর্করহিত। চৈতন্যও তেমন পরিণতির দিকে এগিয়ে চলেছে। এখন যদি ধরে নিই শৈশব হল মানব ধারনার মুল বা উৎস, তাহলে আমরা পরের পরিণতিগুলোকে বুঝতে পারব কিন্তু তা বলে সেই অবস্থাটাকেই টিকিয়ে রাখতে হলে চৈতন্যের কোনো পরিণতি লাভ করত না। আইডিয়ার ক্ষেত্রেও তাই, যদি উৎসটাকেই জোর জরবদস্তি করে টিকিয়ে রাখতে চাই তাই হবে মূলকে চেপে ধরে রাখার ব্যার্থ ও ভুল চেষ্টা ---এটাই যে কোনো মৌলবাদী  চিন্তার আকর। এখানেই আইডিয়া তার প্রাপ্য পরিণতি না পেয়ে স্থবির হয়ে ওঠে এবং হন্তারক হতে উস্কানি দেয়। এ যেমন ধর্মীয় গোষ্ঠীর  ক্ষেত্রে সত্য তেমনই সত্য রাজনৈতিক মতবাদের ক্ষেত্রেও।মৌলবাদ শব্দটা সর্বার্থে খারাপ এই ধারনাটাও ভুল। আদপে কোনো ধারনা যখন উৎসের স্থিতাবস্থাকেই বজায় রাখতে চায় তখনই সেটা মৌলবাদী হয়ে পরে। কারন তা চেতনার স্বাভাবিক পরিণতিকে অস্বীকার করে। সেদিক দিয়ে কট্টর মার্ক্সবাদীও মৌলবাদী কিন্তু সে যে খুব খারাপ লোক এইভাবে দাগিয়ে  দেওয়ার যায় কি? কিন্তু কারো মৌলবাদী চিন্তা যদি অন্যের স্বাভাবিক পরিণতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় সেটা তখন সংর্ঘসের কারন হয়ে ওঠে। একজন মানুষ যিনি ঈশ্বরের আইডিয়াকে খন্ডন করতে চায় তাকে যারা প্রকাশ্যে খুন করে তারা আসলে সেই মানুষটার রক্ত মাংসের শরীরটাকে নিছক মারে না ,আদপে সে যে মানুষ, এই বেসিক আইডিয়াটাকে খুন করে ।আর মানুষ হিসাবে  স্বীকৃতি দেবার   এই আইডিয়াটাকে  সরিয়ে নিলে যে কোনো কাউকেই মারা যায়। তখন খড়ের মূর্তি আর সত্যিকারের মানুষের মধ্যে মূলগত কোনো পার্থক্য থাকে না খুনির কাছে। চেতনা সম্পর্কিত আইডিয়াগুলো নুনের মত।  নুন না দিয়ে খেলে মাংস আর সবজির মধ্যে স্বাদের তেমন তারতম্য থাকে কী? নুনের নিজস্ব স্বাদ কোথায় কিন্তু সে ভিন্ন ভিন্ন খাবারের স্বাদের যে বিশিষ্টতা তাকে নির্ধারন করে। এই আইডিয়াগুলোকে আমাদের ব্যাবহারিক জীবনের মর‍্যালের প্যারামিটার দিয়ে চ্যালেঞ্জ করা চলে না। কারন চেতনার সম্যক ধারনা পেতে চাওয়ার  এই সুপ্রাচীন আইডিয়াগুলোই মানব সমাজকে  সমগ্র সৃষ্টির নিরীখে তার অস্তিত্বের কার্যকারনের গভীর সত্যকে উপলব্ধি করতে শিখিয়েছে। নৈর্ব্যাক্তিক ধাঁচায় চেতনার পরিণতিকে বুঝতে হবে , আর বুঝতে পারলে এটাও অনুভব করব যে একজন ব্যাক্তিকে যখন প্রকাশ্যে আইডিয়ার কারনে খুন করা হয় তার থেকেও বেশি ভয়ংকর যখন বেমিয়ানের বুদ্ধমুর্তি বা সাম্প্রতিক আই এস আই এর প্রাচীন আসিরিও সভ্যতার নির্দশনগুলোকে ধংস করা। সেখানে প্রায় কোটি কোটি অভিজিৎ রায় খুন হয়ে যান। ব্যাক্তি মানুষের খুনটা চাক্ষুস করা যায় বলে যতটা আমাদের প্রভাবিত করে সভ্যতার বেসিক আইডিয়ার স্মারকগুলোর ধংস আমাদের চিত্তে ততটা প্রভাব ফেলে না কারন আমরা অভিজিত রায়ের ওপর মানুষের আইডিয়াকে চাপিয়ে দিতে পেরেছি কিন্তু পাথরের ওপোরে দিতে পারিনি। কিন্তু যদি পারতাম তবে বুঝতাম বেমিয়ানের বুদ্ধমুর্তিকে রক্ষা করতে না পারার কারনেই অভিজিত রায় খুন হলেন, অথবা সিরিয়ার ইসলামিক গ্রুপগুলো প্রতিদিন যে নারকীয় গনধর্ষন করে চলেছে তার পিছনে সেই আইডিয়ার খুন। অর্থাৎ এই সব অসহায় নারীরা  তাল তাল মাংসপিন্ড ছাড়া কিছু নয়।একারনে মানুষ পুরুষ বা নারীকে নিছক মানুষ নয় কখনও দেবত্বও আরোপ করে,  আর করে বলেই সে প্রেম ও পূজাকে আবিষ্কার করেছে।

সেমেটিক কোনো ধর্মে নারীর কোনো স্থান নেই, তা ইহুদি হোক, কি খ্রীষ্টান বা পরবর্তীর ইসলাম। তাই ইসলামিক গ্রুপ যখন মৌলবাদী হয়ে ওঠে তখন সবেচেয়ে আগে ও বেশি করে আক্রান্ত হয় নারী কারন এই যে-নারীর আইডিয়াটাই যখন মুল ধারনার সঙ্গে সাযুয্যবিহীন তখন মৌলবাদী হয়ে ওঠার সর্তেই তারা নারীকেই সবচেয়ে আগে টার্গেট করে।

কোলকাতা শহরের হস্টেলে  একদল ছাত্র-ডাক্তার কত অনায়াসে গরীব কুরপান শাহকে নৃশংসভাবে খুন করে কারন অর্থনৈতিক ও জাতের প্রভুত্ব এক মৌলবাদী নিশ্চয়তা দেয় যেখানে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা শিক্ষিত যুবকদের এই যুথবদ্ধ খুন ততটা ধিকৃত হয় না,  যতটা অভিজিত রায়ের খুনিরা হয়।কারন যারা প্রতিবাদে মুখর তাদের মনস্তাত্ত্বিক শ্রেনীগত মৌলবাদ খুনে ডাক্তারদের শ্রেনী চরিত্রের সঙ্গে মিলে যায়। কিন্তু অভিজিত রায়ের খুনিদের সঙ্গে আমরা নিজেদের আলাদা করে নিতে পারি কারন সেখানে নির্দিষ্ট ধার্মিক প্রোপাগাণ্ডা কেবল অন্যায় ও হানিকর তাই নয় শুধু ,এর কারন আরো গভীর, তা হল  ইসলামিক গ্রুপের মৌলবাদ তার মৌলবাদের নিজস্ব বিশিষ্টতায় প্রাচীন বৈষয়িক(Old Feudal Economy)  ব্যাবস্থার সমর্থন করতে গিয়ে Capitalism, Crony Capitalism  consumerism কেও চ্যালেঞ্জ করে। সেই চ্যালেঞ্জটা নেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই যে যে ধর্মীয় গোষ্টি মৌলবাদী হয়ে ওঠার কারনে ক্যাপিটালিস্টিক কন্স্যুমার সোসাইটিকে নসাৎ করে তাকেই আমরা বেশি ভয় পাই। সে জামাত হোক কি আর এস এস, কারন মৌলাবাদের ‘গোষ্টির বিশিষ্টতায়’ তারা আধুনিক কালের অনেক ব্যাধিকে ভুল পথে চ্যালেঞ্জ করে , তা নাইট ক্লাবের নাচ গান ও হতে পারে কি ভ্যালেন্টাইন ডের উৎসব। কিন্তু খ্রীষ্টান ও ইহুদি মৌলনাদীরা  তাদের থেকে নৃশংসতায় এতটুকু কম না হওয়া সত্ত্বেও ক্যাপিট্যালিস্টক ব্লকের সর্মর্থন করায় ধিক্কারের বাইরে থেকে যায়। তাই কোরপান শাহের খুন কিংবা মধ্যভারতের আদিবাসীদের লাগাতর ধর্ষন ও খুন সোশ্যাল মিডিয়ার তেমন আকর্ষনীয় প্রতিবাদের হেতু হয়ে ওঠে না---মৌলবাদের এই চেহারা আমরা নিজেদের ভোগী-জীবনের প্রয়োজনেই দেখতে চাই না। আমাদের প্রতিবাদগুলো  খন্ডিত এবং দরকার মত বাড়ে কমে।
                                                           

“ভূপৃষ্ঠে দম্ভভরে বিচরণ করো না, তুমি তো কখনওই পদভারে ভূপৃষ্ঠ বিদীর্ণ করতে পারবে না।“-আল-কোরআন, সুরা বনি ইস্রাইল,আয়াত ৩৭।

বিশ্বাসীকে  নিয়ে খুব বেশি গোলমাল হয় না।হয়নি গত আট-দশ হাজার বছর ধরে।  আদপে বিশ্বাসীর সংকট তৈরী হয় কখন? আদপে “আমি” ব্যাতিরেকে জগতকে আমরা বেশিরভাগ মানুষই কল্পনা করতে পারি না।এই নিরেট “আমিত্ব” চিন্তা করে তার ভাবনা তার বিশ্বাস তার শাস্ত্র ব্যাতিরেকে জগতের কোন অস্তিত্ত্ব  নেই।আর যখন এই “আমি” অপরকে ধংস করে জিততে চায় তখন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধার্মিক প্রভুত্বের মোহ, আধুনিক রাষ্টের ক্ষুদ্র জাতীয়তাবাদের “আমিত্বের” নিগড়ে আর সব যা যা আমার মতো নয়, তা আমার থেকে ভিন্ন বলেই খারাপ ও তার বিনষ্টীতে আমার সংশয়াতীত প্রাধান্য। অথচ এই উপমহাদেশ, বস্তুত সমগ্র দক্ষিন-পুর্ব এশিয়া মতবাদের বহুত্ত্বকে লালন করেই হাজার হাজার বছর ধরে নিজেকে বিস্তার লাভ করেছিল। নানা ধরনের বিশ্বাসে বিশ্বাসী, নিরক্ষর, সাক্ষর, নাস্তিক, ধার্মিক, সংস্কার মুক্ত, কুসংস্কারে মজ্জিত, সাধারণ , উচ্চায়ী, সামন্ত প্রভু, ও নিরন্ন প্রজা , সবাই ছিল নিজের নিজের অবস্থানে কিন্তু ক্ষণে  ক্ষণে মারকাটারি সন্ত্রাস করেনি আধুনিক কালের সাম্রদায়িক দাঙ্গা তারা জানতই না। সব পথ নিশ্চই কুসুমাস্তীর্ন ছিল না। কিন্তু তার ঐতিহাসিক কার্যকারন ভিন্ন। এই পরিসরে তা আলোচ্যও ন্য়।  আজো ধার্মিক মৌলবাদের ও সন্ত্রাসের উৎস ও লালন হয় শহরে। সাধারন ছোট জনপদ ও গ্রামে নানা ধর্মে ও আচরনে বিশ্বাসীদের মধ্যে আজো এক প্রাকৃতিক সহাবস্থানের পরিবেশ আছে যা ক্রমশ নাগরীক সভ্যতার লোকেরা বিনষ্ট করে চলেছে। পরিসংখ্যানও তাই বলছে, যে গত ৫০ বছরে ভারতের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায়  মাত্র ৪% গ্রামের মানুষ বলি হয়েছে---যেখানে দেশের ৭৫% মানুষের বাস। আর ২৫% শহুরে মানুষের অসহিষ্ণুতার বলি সাস্ম্রদায়িক দাঙ্গার আর বাদবাকি ৯৬% মানুষ। তাইতো সমাজতাত্বিক আশিস নন্দী সঠিকর্থে বলেন “. To go to an Indian village to teach tolerance through secularism is a form of obscene arrogance to which I do not want to be a party.” 

আমাদের তথাকথিত সেকুল্যারিজম এর আইডিয়া বয়সে নবীন। বড়োজোর ৩০০ বছরের পুরোনো ধারনা। তবু সারা বিশ্বেই এই আইডিয়ার কেউ বিরুদ্ধতা করছে না।কিন্তু সেক্যুলারিজম না জেনেই আমাদের নিরক্ষর গ্রামীন পুর্বজরা অনায়াসে এই দেশে হাজার হাজার ধরে বসবাস করেছে। তাই ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে  , সেক্যুলারিজমকে সর্বরোগহর ভাবলে নিতান্ত ভুল হবে, অন্তত আমাদের এই দক্ষিন-এশিয়ায় ,  এই উপমহাদেশ যেখানে , অশোক, আকরব, সাহাজাদা দারশুকো, গৌতম বুদ্ধ, শ্রীচৈতন্য, কবীর, লালন, রবিন্দ্রনাথ, গান্ধীকে পেয়েছে,  তাঁদের অন্তর্গত আলোর কাছে ইউরোপ কী আলোক ফেলতে পারে। সহাবস্থানের আইডিয়া, অপরের মতকে সহ্য করার শক্তি, সাধারন মানুষের প্রাত্যহিক ক্ষুদ্র জীবনে যে ফলিতরূপ আমরা হাজার হাজার বছর ধরে দেখে আসছি, তার কাছে কোন তত্ব, লাগে? হ্য়ত এই মানুষেরা  নানা রকম বিশ্বাসে বিশ্বাসী, হয়ত তাদের অনেকেই কুসংসকারে নিমজ্জিত, কেউ কেউ যুক্তিহীন প্রশ্নহীন আনুগত্যে বিশ্বাসী, এমন কি আদিম ধারনাকেও লালন করে, তবু তাদের সহিষ্ণুতা আমাদের তথাকথিত যুক্তিবুদ্ধি সম্পন্ন শিক্ষিত শহুরে লোকেদের থেকে অনেক বেশি।চাবার্কের দর্শন ছাড়াও জৈন কি বৌদ্ধ ধর্মের মত প্রতিবাদী ধর্মের কথা আমরাতো কম বেশি শুনেছি।কিন্তু এর বাইরেও আউল-বাউল-ফকির আর শত শত গৌনধর্মের যে ধারা তাতেই পুষ্ট হয়েছে এই উপমহাদেশের ভূমি। আমি সেক্যুলারিজম এর থেকেও এই ধারার পুষ্টিকে বেশি গুরুত্ব দিতে চাই। কারন এই ধারা আমাদের নিজস্ব এবং সৃষ্টিশীলতার নানা ভিন্ন ভিন্ন স্ত্রোতকে নিয়ে গেছে দূর দূর নাম না জানা জনপদে। ভাসিয়ে দিয়েছে সব ক্ষুদ্রতা।

“হিন্দু-মুসল্মানের মিলনের এই চেষ্টা সাধুরা করিয়াছিলেন প্রেমের দ্বারা। আরেক দল চেষ্টা করিলেন ধর্ম-বিশ্বাসের সম্মেলন দ্বারা। তাহা হইতে খোজাদের ধর্মের সৃষ্টি হইল(আগাখান এই দলের ইমাম বা গুরু)। খোজারা শিয়া কিন্তু বিশ্বাস করে যে বিষ্ণু নয়বার পৃথিবীতে মৎস , কূর্ম, বরাহ ইতায়দি রূপে অবতীর্ণ হইয়াছেন, শুধু যেখানে বৈষ্ণবরা বিশ্বাস করে ভবিষ্যতকালে বিষ্ণু কল্কিরূপে অবতীর্ণ হইবেন সেখানে খোজারা বিশ্বাস করে যে আলী(শিয়াদের প্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ ইমাম) কল্কিরূপে মক্কায় অবতীর্ণ হইয়াছেন। শুধু তাহাই নহে, মৃত্যুর পর তাঁহার আত্মা তাঁহার পুত্র হাসান, তৎপর হুসেন ও বংশানুক্রমে অবতীর্ণ হইয়া আগাখানে আসিয়াছে। আগাখান তাই শুধু পীর বা ইমাম নহেন তিনি সাক্ষাৎ কল্কি।খোজারা তাই কুরান পড়ে না, তাহাদের সর্বপ্রধান ধর্মগ্রন্থ তাহাদেরই এক পীর কর্তৃক গুজরাতিতে লেখা “দশাবতার”। খোজারা জাকাত দেয় না—আগাখানকে “দশোন্দ” দেয়, হজে যায় না, আগাখানকে প্রর্দশন করে---তাই তাঁহাকে প্রায়ই বোম্বাই আসিতে হয়। রমজান মাসে উপবাস করে না ও নামাজ পড়ে তিনবার, তাও আরবীতে নয়, হয় কচ্ছী নয় গুজরাতিতে। পাঞ্চরাত্রে যে সব দেব দেবীর উল্লেখ আছে তাঁহাদের নাম উপাসনার সময় স্মরণ করে। বিষ্ণুর নয় অবতারকে বিশেষ ভক্তি নিবেদন করে আর আগাখান ত স্বয়ং বিষ্ণু।“(মুসলিম সংস্কৃতির হেরফের---সৈয়দ মুজতবা আলী)

আধুনিক কালের ইসলাম ও তুলনামুলক ধর্মীয় দর্শনে যার প্রজ্ঞা আমাদের মুগ্ধ করে তিনি ইরানের মানুষ, রেজা আসলান, ছোটো বয়সে বাবা-মার সঙ্গে চলে যেতে হয় আমেরিকা। বাবা ছিলেন চুড়ান্ত নাস্তিক। যৌবনে রেজা খ্রীষ্টান হয়ে গেছিলেন। কিন্তু পরে ইসলামে ফিরে আসেন। রেজা বলেন ধর্ম অনেকটা ভাষার মত। আমি ইসলামে কথা বলি। একটু পড়ে নিতে পারি রেজার কথা।

 " It is hard for me to think of religion in any other way except as the language to express faith. Islam provides me the language to understand god.
 It is important to understand that religion is a means to an end. It is not the destination but a path. 
Islam is that path. In other words, I can say I don't believe in Islam, I believe in god.
If I were to label my search, I would surely say it is influenced by Sufism. But such labels are not helpful. When you call yourself a Sufi, a Shia, Sunni or Ismaili, you immediately put up yourself as the Other.

The Islam in South Asia is the promise of what Islam could be.
 The Arab interpretation of Islam often leads to the insidious interpretation which makes the Saudis and Wahabis to impose a view of Islam they claim in the only correct one.
That is absurd, ridiculous. Frankly, it is blasphemous.
The real beauty of Islam is that it can mean anything a community wants it to be. Islam in the US is nothing like the Islam in Egypt which is nothing like the Islam in Turkey. There are a thousand different expressions of Islam and that is why Islam is such a beautiful religion. The South Asian Islam has soaked up other traditions and is a wonderful, beautiful expression of what Islam can be.".
 “There’s no question that there has been a virus that has spread throughout the Muslim world, a virus of ultra-orthodox puritanism,.But there’s also no question what the source of this virus is — whether we’re talking about Boko Haram, or ISIS, or al Qaeda, or the Taliban.”
“All of them have as their source Wahhabism, or the state religion of Saudi Arabia,” . “And as we all know, Saudi Arabia has spent over $100 billion in the past 20 or 30 years spreading this ideology throughout the world.”
there is a gospel of Gautam Budhha..."our house is most precious and loved one but when its ruined by the virtue of ages and other reason like earthquake then its better to come out for immediate safety"

আজকের বাংলাদেশ পাকিস্তান আফগানিস্তান থেকে সিরিয়ান আই এস আই, এই সৌদি চক্করে পড়েছে। বিভৎস কদাকার খুনে একটা মুখ নিয়ে সে বাড়ি বাড়ি ঘুরছে, “আমিত্বের” বিরুদ্ধতা দেখলেই এর মাথা কাটছে ওর গলা কাটছে। বাংলাদেশের এই করুণ পরিণতি আমরা স্বপ্নেও কল্পনা করিনি। যে স্বাধীনতার মূলে ছিল ভাষা নিয়ে প্রগাঢ় প্রেম ও অভিমান সেই জাতি যে এমন কাঠমোল্লা সৌদি নির্দেশিত ঘাতকের অবাধ চারণভুমি হয়ে উঠবে তা ২৫ বছর আগেও আমরা ভাবিনি।কাল যদি একদল লোক শিলাইদহে চড়াও হয়ে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিছিহ্ন সব মুছে দেয় আমি অবাক হব না। বাংলাদেশে এখন যেকোন নারকীয় কাজ , যে কোন কিছু হতে পারে বস্তুত যা যা তালিবানরা করতে পারে সব কিছু হতে পারে।

আরবে পৃথিবীর তিনটি বিখ্যাত ও আলোচিত ধর্মের জন্ম ও বিস্তার হয়েছে। প্রথমে ইহুদি তারপরে খ্রীষ্টান ও শেষে ইসলাম, যাদের মধ্যে আচরনগত বিভেদ থাকলেও প্রক্রিয়াগত প্রচুর মিল আছে।বলা যায় একটা কনসেপ্ট অন্য কনসেপ্টে ইন্টারসেপ্ট করেছে নিজেদের অজান্তে ও সামাজিক আর রাজনৈতিক বাধ্যকতায়। সমগ্র পৃথিবীকে নিয়ে প্রথম লিখিত ইতিহাস বই যার ১২০০ পাতার প্রস্তাবনা লিখতে লিখতেই মারা যান   টিউনিশিয়ান ইসলামিক ঋষি ইবন খালদুন(১৩০০ সন) , তাঁর আল মুকাদ্দমার,  সিভিলাইজেশন নিয়ে বলতে গিয়ে লিখছেন , “Human social organization is something necessary. The philosopher expressed the facts by saying :”Man is Political by nature.”That is, he can not do without the social organization for which the philosophers use the technical term “town”(polis). This is what civilization means. (The necessary character of human social organization or civilization) is explained by the fact that God created and fashioned man in a form that can live and subsist only with the help of food. He guided man to a natural desire for food and instilled in him the power that enables him to obtain it.”

এখান থেকেই একটা জিনিষ আমরা লক্ষ্য করি যে আরবে জন্ম হওয়া ধর্মগুলো সৃষ্টির আদি রহস্য ও তার সঙ্গে মানুষের চৈতন্যের কার্যকারন সুত্রের সুক্ষ্ণতার দার্শনিক ব্যাখ্যা ও খননের থেকে সেই সময়ের সামাজিক ও বাস্তব কারনের ওপোর দাঁড়িয়ে “surface reality”র ওপোর বেশি জোর দিয়েছে।এটা এইসব ধর্মের ভুল বা ঠিক দিক বলছি না । বলছি এগুলো এইসব ধর্মের বিশিষ্টতা ও নিয়মকানুনের আধিক্যের কারন।যেমনটা সম্পদকে নির্দিষ্ট গোষ্ঠির মধ্যে কুক্ষিগত করে রাখার উদগ্র বাসনা, এই উপমহাদেশের পালনীয় নানা উপধর্ম ও আচারের খোলামেলা পরিবেশকে কলুষিত ও ধ্বংস করে ব্রাক্ষ্ণণ্য হিন্দু ধর্মের বিস্তার ও জয়কে নিশ্চিত করেছিল। যেটা ধার্মিক খ্রীষ্টান বাড়িতে জন্ম নেওয়া কার্ল মার্ক্সের পিরামিড আকৃতির ও প্রশ্নহীন আনুগত্যের  আধারে তৈরী “Doctrine” নির্ভরশীল মতবাদেও দেখতে পেয়েছি।

সেই ১৯৭৬ এর মন্ট্রিল অলিম্পকে মৌলবাদী হানা, তারপর ইরাক-ইরানের লাগাতর যুদ্ধ, সোভিয়েত ব্লকের পতন , ইউনিপোলার পৃথিবীতে আমেরিকার দাপিয়ে বেড়ানো ,ইস্রায়েলের যাবতীয় নারকীয় হত্যালীলায় পশ্চিমি দেশগুলোর সমর্থন,  দুটো উপসাগরীয় যুদ্ধ , ইসলামিক মৌলবাদের ও সন্ত্রাসবাদী নানা আরব গ্রুপকে একাট্টা করেছে। তেল উৎপাদক দেশ গুলোর মধ্যে ঝগড়া লাগিয়ে ফায়দা তুলেছে আমেরিকা, আর কুয়েতে নিজেদের ঘাঁটি গেড়েছে। সৌদির মৌলবাদী হিংস্র সুলতানকে নিজেদের তাঁবে এনেছে। কলিনপাওলের ছেলেরা উপসাগরীয় যুদ্ধের শেষে আরবে ঠিকাদার বনেছে। মামুলি সিভিল কন্ট্রাকটরকে কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী লাদেনে পরিনত করেছে কারা? ইতিহাস জানে আমেরিকার ও পাকিস্তান তালিবানদের স্বীকৃতি না দিলে, আফগানিস্থানের নাজিবুল্লাকে প্রকাশ্যে খুন করে ঝুলিয়ে না রাখলে ও রাশিয়ার জুজুকে শেষ করার জন্য ইসলামিক সন্ত্রাসবাদীদের অস্ত্র ও অর্থ সাহায্য না করলে তালিবানরা না আজকের আই এস আই রা তৈরী হত না। আজকে ইয়েমেনেও সেই সংকট।ওবামা , স্থলযুদ্ধে আমেরিকা আর অংশ গ্রহন করবে না,  এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন,  তাই আই এস আই এর ওপোর বিমান থেকে বোমা ফেলছে এতে শিয়া পন্থী  ইরানের, আমেরিকার সেই চীর শত্রু ইরান, সুবিধা হচ্ছে। উলটে বন্ধু সৌদি পড়ে গেছে উভয় সংকটে একদিকে আই এস আই’এর মৌলবাদী হিংসাকে মানসিক সমর্থন আর উলটো দিকে আমেরিকার কথা  মেনে আই এস আই’এর বিরুদ্ধে চলা অভিযানে নিজেদের সেনা পাঠানো।

সৌদির রাজাই পার্লামেন্টের মেম্বার নিয়োগ করেন, সুপ্রিম কোর্টের জাজও তিনিই নিয়োগ করেন। আবার সুপ্রিম কোর্টের জাজের কোনো সিদ্ধান্ত রাজাই বাতিল করতে পারেন। কি মজার না ? অথচ ইসলাম মানেই তো ধর্মান্ধ হিংস্র কিছু মানুষের মুখ নয়। জার্মানীর বন ইউনিভার্সিটির কম্পারিটিভ রেলিজিয়াস স্টাডির বাঙালী মনীষী  সৈয়দ মুজতবা আলী যা বলে গেছেন তার থেকে রেজা আসলান খুব ভিন্ন কিছু বলছেন না। “মুসলমান ধর্ম আরবে যে যুগে জন্মগ্রহন করিল তাহাকে আরব ঐতিহাসিকেরাই বর্বর(জাহিলিয়া) যুগ নাম দিয়েছেন। ।। কিন্তু এই আরবেরাই যখন পরপর পারস্য, সিরিয়া, ফিলস্তিন, মিশর, স্পেন, তুর্কিস্তান। এশিয়ামাইনর, তুর্কী,আফগানিস্তান ও ভারতবর্ষ জয় করিল তখন বিজিত জাতিদের লইয়া তাহারা যে সভ্যতা গড়িয়া তুলিল তাহা যে শুধু সে যুগের মুসলমান , অমুসলমান পন্ডিতের চমৎকৃত করেছিল তাহা নহে, এখনও তৎকালীন মুসলমান সভ্যতার সঙ্গে সমসাময়িক ইয়োরোপীয় সভ্যতার তুলনা করিয়া আশ্চর্য হই।...নিতান্ত আশিক্ষিত বর্বর দেশগুলি বাদ দিয়া ইসলামের জয়যাত্রার অনুসরণ করিলে আরব ছাড়িয়া প্রথমেই পারস্যে আসিতে হয়। পারসিকরা তখন আরবদের অপেক্ষা অনেকগুন সভ্য, তাহাদের স্থপতি, কলা, অলঙ্কার, রাজসভার ঐশ্বর্য্য জীবনযাপনের তৈজসপত্র রণসম্ভার সভ্য বাইজানটাইনদিগের অপেক্ষা কোন হিসেবে নিকৃষ্ট তো ছিলই না বরং অনুমিত হয় পারসিকদের প্রভাব তখন বাইজানটাইনের সভ্যতাকে অভিভুত করিয়া ফেলিয়াছিল... কিন্তু তৎসত্ত্বেও অশিক্ষিত অসভ্য আরব শুধু যে সেই পারসিকদের পরাজিত ও বশীভূত করিল তাহা নহে, আরবের সরল , দৃঢ একেশ্বরবাদের সম্মুখে পারসিক দ্বৈতবাদ পরাজিত হইল। ...পারসিক পন্ডিতমন্ডলী সরল ইসলাম ধর্ম গ্রহন করিলেন কিন্তু তাঁহাদের ধার্মিক মন শুধু শরিয়ত(ক্রিয়াকান্ড) মানিয়া তৃপ্ত হইল না। এখানে স্মরণ রাখা আবশ্যক যে আজ মুসলমান ধর্ম বলিতে আমরা যে সুস্পষ্ট সংজ্ঞাবদ্ধ বিশ্বাস ও আচরণের ফিরিস্তি পাই তখনও তাহা গড়িয়া উঠে নাই। শিয়া মতবাদ মদিনায় জন্মগ্রহন করে কিন্তু তাহার পরিপুষ্টি হইল পারস্যে। গনতান্ত্রিক আরবের মধ্যে মুহম্মদের বংশধরগনের বিধিদত্ত অধিকার স্বীকৃত হইল না, কিন্তু প্রাচীন ইরানে ভুপতিকে ঈশ্বরের অবতাররূপে স্বীকার করা হইত বলিয়া  আলীও তাঁহার বংশধরগ সেখানে ঐশী শক্তির আধার-রুপে স্বীকৃত হইলেন। পারস্যে তাই আলী ও তাঁহার বংশধরগন শুধু যে রাজনৈতিক সমর্থন পাইলেন তাহা নহে , ধর্মক্ষেত্রেও স্বীকৃত হইল যে তাঁহাদের বাণী আপ্তবাক্য। কুরান যেরূপ অভ্রান্ত হইতে পারে না---ধর্মক্ষেত্রে তাঁহাদিগকে বিশেষ কোনও অধিকার দেওয়া যাইতে পারে না----সেখানেও গতন্ত্র। একমাত্র পন্ডিতদের সর্ববাদী মতই অভ্রান্ত হইতে পারে---কারণ মুহম্মদ বলিয়াছেন আমার বংশধরেরা কোন বিষয়ে একমত হইলে তাহা ভুল হইতে পারে না। ইহাই মুসলমানের স্মৃতিতে “ইজমা” রূপে গৃহীত।...ইহার মধ্যে আরেক ভাবতরঙ্গ আসিয়া পারস্যের ধর্মজগৎকে আলোড়িত করিল। নিওপ্লাতনিজমের রহস্যবাদ ইস্কন্দরিয়ার পুষ্টিসাধন করতঃআরবীতে অনুদিত হহিয়াছিল। দুই-একজন সাধু এই রহস্যবাদের(সুফি বা ভক্তিমার্গের) দিকে আকৃষ্ট হইলেন। উল্লেখ করা প্রয়োজন ইহা ইসলামে সম্পুর্ণ নতুন নহে। কুরানের “নূর” অধ্যায়ে আল্লার যে বর্ণনা করা হইয়াছে তাহাতে রহস্যবাদের উৎস পাওয়া যায়। আল্লা যদি নূরই(জ্যোতিঃ)হইলেন , তাহা হইলে শুধু শরিয়তের বিধান মানিয়া তাঁহাকে কি করিয়া পাইব? মানুষের ভিতর যে নূর আছে তাহাকে পঞ্চেন্দ্রিয়ের তমসান্ধকার কাটাইয়া সেই বিশ্বনূরের শিত মিলিত হইতে হইবে। তাহার জন্য কৃচ্ছসাধন দরকার ---ধ্যানের প্রয়োজন।আর কে না জানে মুহম্মদ ঐশী বানী প্রাপ্ত হইবার পূর্বে মাসের পর মাস হিরার পর্বত কন্দরে ধ্যানমগ্ন ছিলেন। সূফীরা বলিলেন শাস্ত্রের তর্কজালে বন্দী হইয়ো না ; স্বয়ং মুহম্মদ যে মার্গ গ্রহন করিয়া নূর পাইয়াছিলেন সেই পথ ধরো। সূফীমার্গের সাধনা পারস্যের চতুর্দিকে বিস্তৃতিলাভ করিল। প্রাচীনপন্থীরা ঘোর প্রতিবাদ তুলিলেন কিন্তু তাহার সমাধান করিলেন সাধু গজ্জাল।তিনি ছিলেন একাধারে দার্শনিক, শাস্ত্রঞ্জপন্ডিত ও সুফি । তাঁহার অপুর্ব লেখনীর বলে সুফিমতবাদ পাংক্তেয় হইলো সঙ্গে সঙ্গে পুর্বোল্লিখিত বহু মত সুফিধর্মের ভিতরে আসিয়া আশ্রয় লইল।

সূফিমত তাহার নানা শাখাপ্রশাখায় কাদেরিয়া , কদমিয়া , নকশাবন্দী নানা সম্প্রদায় এদেশে প্রসার লাভ করিল।বাঙালী সুফিরা জিকর বা ভজনা করে , বারম্বার নাম উচ্চারন করিতে করিতে “হাল’ বা ‘দশা’ প্রাপ্ত হন, সেতার বা একতারা যোগে মধুর গান করেন, পঞ্চেন্দ্রিয়ের দ্বার রুদ্ধ করিয়া সমাধিস্থ হন। এক কথায় বাঙালী সুফি ইরান ও উত্তর ভারতবর্ষের সুফি ঐতিহ্য সঞ্জীবিত রাখিলেন। কিন্তু ইহার প্রভাবে অত্যন্ত নিম্ন শ্রেনীর হিন্দু-মুসলমানের ভিতর যে রসধারা সৃষ্টি তাহা অপুর্ব ও আধ্যাত্মিক জগতে যে মিলন হইল পৃথিবীর ইতিহাসে তাহার স্থান পাওয়া উচিত।আউল, বাউল, মুরশীদিয়া, দরবেশী, সাঁই, মরমীয়া, জারীগান। গাজীর গীত সমাজের নিম্নতম স্তর হইতে উঠিয়াছে তথাপি সে গীতে বাঙালী ভক্তের আধ্যাত্মিক অনুভুতির যে পরিচয় পাই তাহার সহিত কোন দেশেরই –ইয়োরোপের বলুন আর এশিয়ার বলুন –লোক সাহিত্যের তুলনা হয় না।“

                                                          ৩

এখন আধুনিক সৃষ্টিশীল মন ক্রমে সংশয়বাদী হয়ে উঠছে ও নানাভাবে জীবননে ছুঁতে চাইছে। তার সবটাই খুব মনগ্রাহী তা হয়ত বলা যাবে না কিন্তু “Doctrine” নির্ভর সংগঠগুলোর মধ্যে তীব্র প্রভাব ফেলছে। যেটা এই উপমহাদেশের “ব্রাক্ষ্ণণ্যবাদী হিন্দু” ধর্মের লোকেদেরও অন্যান্য “Puritan” and “Religious Dogma” নির্ভর সংগঠনগুলোর সঙ্গে একাসনে বসিয়ে দিয়েছে। মজার কথা নরেন্দ্র মোদী গোপনে ও প্রকাশ্যে যে দেশেটার থেকে গত দশ বছর ধরে থেকে সবচেয়ে বেশি মান্যতা ও অন্যান্য সুবিধা পেয়েছে তা হল ‘মাওসেতুং এর চীন”। মতবাদগুলোর মধ্যে বহিরঙ্গে বিরোধ আছে কিন্তু অস্তিত্বের সংকটের আভন্তরীন মিল আছে বলেই বি জে পি, জামাত, পাকিস্তানি দলগুলো ,চীন , আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও পশ্চিম ইউরোপ, একে অপরকে দরকারে সাহায্য করে। সেটা সরাসরি একে অপরকে প্রকাশ্য সাহায্য হতে পারে যেমন ওবামার ভারতে আগমন কি মোদীর চিনাগমন আবার পরোক্ষে অর্থাৎ কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানকে একযোগে বিরোধীতা করা একইরকম জঙ্গীপনা দিয়ে। এরা এদের নিজস্ব লড়াইয়ের মল্লভুমিটায় কোন সংশয়বাদীকে দেখতে চায় না।

গত কয়েক বছর আগে বিখ্যাত নৈরাজ্যবাদী চিন্তাবিদ জন জেরজান কলকাতার একটি সেমিনারে খুব মজা করে বলেছিলেন যে “কম্যুনিষ্টরা ভেবেছিল উন্নয়নের ঢাউস ও পরিবেশ বিরোধী ব্যাপারস্যাপারগুলো একই থাকবে শুধু পুঁজিবাদি দলের যায়গায় , ক্ষমতার মাথায় পার্টির নির্দেশে চলা সরকার বসবে। “ ভুত আছে কি নেই আমি জানিনা , কিন্তু ভুতের ভয়টা সত্যি।

ঈশ্বর মানুষের সৃষ্ট সবচেয় মোলায়েম ও সৃষ্টশীল ধারনা, যা সত্যি কি মিথ্যে , প্রমানিত কি অপ্রমানিত তা নিয়ে আমার কোন মাথাব্যাথা নেই, বরঞ্চ কিছু একটা প্রমান হয়ে গেলেই ব্যাপারটা পানসে হয়ে যাবে, তখন কি করে শুনব “নিকুঞ্জে দখিনা বায়, করিছে হায় হায়...” কি করে তবে “চোখের জলে লাগল জোয়ার...”

বেদ ভিত্তিক বার্হ্মণ্য ধর্মকে একদিন নাস্তিক(যারা বেদকে মানেন না)  বৌদ্ধ ধর্মের সামনে ঝুঁকতে হয়েছিল ।নিম্ন বর্গের যারা , তারা বার্হ্মণ্য ধর্মের উঠোনে যায়গা না পেয়ে সাম্যবাদী সঙ্ঘের জীবনে শান্তি খুঁজেছিল। বৌদ্ধ ধর্ম নানা কারনে যখন বিলুপ্ত হল এদেশে তখন সেই সব নিম্ন বর্গের আবার হিন্দু ধর্মে প্রত্যাবর্তন করে  মৌলবাদী পুরহিত তন্ত্রের কাছে মানুষ হিসেবে অছ্যুতই রয়ে গেল। তারা অন্দোলনের পথে গেল। কারন প্রতিবেশি সাম্যবাদী মুসলমানের ধর্মে পুর্ণাধিকার। যে শুদ্র দুদিন আগেও মন্দিরে ঢুকতে পারতো না সে মুসলিম হয়ে মসজিদে অবাধে প্রবেশ করল। তারা দেখল ক্রিয়া কর্মে এই নব্য মুসলিমদের সঙ্গে পন্ডিত মুসলিমের কোন তফাৎ নেই। যারা মুসলিম ধর্ম গ্রহন করলা না , তারা নানা প্রতিবাদী গৌন ধর্মের আশ্রয় নিল।ভক্তির চার আচার্য তবু শুদ্রকে শাস্ত্রে অধিকার দেয় নি। তাদের ধর্মে পূর্ণ অধিকার দেওয়ার চেষ্টা করলেন বাঙলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ---শ্রীচৈতন্য।

আসলে পৃথিবীর সর্বদেশে সর্বকালে কিছু সৃজনশীল মানুষ থাকে যারা অনায়াসে সকল মিথ্যে বাঁধন ছিঁড়ে প্রকৃতির সঙ্গে যে মানবের যে অচ্ছেদ্দ বন্ধন তাকে নানা শিল্পে ও সৃজনশীলতায় মনে করিয়ে দেয়। তাদের সকলের এক একটা করে নিজস্ব ঈশ্বর থাকেন।

“এই বটের, আমি মনে মনে নাম রেখেছিলাম—পিতামহ ভীষ্ম।এই নামের কথা আমি কারও কাছে প্রকাশ করিনি। করতে ইচ্ছেও হয়নি। সবচেয়ে যা তাৎপর্যপুর্ণ তা হল ---আমর কেউ বন্ধু ছিল না। এমন একটি নির্বান্ধব বালকের কথা যদি তৎকালীন অস্তিত্ববাদীরা জানতেন তাহলে আমি এতটা একলা , গুরুত্বহীন, স্বপ্নচারী থাকতে পারতাম না। এবং আমার যে এর মধ্যেও একজন ব্যাক্তিগত-ঈশ্বর ছিল তার সঙ্গে আমাদের সংসার জীবনের কোন মিল ছিল না। বরং সংসার জীবনের নিরন্তর পুজো-প্রনাম-ফলমূল পাওয়া---ঈশ্বরের সঙ্গে আমার এক মুহুর্তের জন্যেও ;আজ এই বুড়োবয়সেও একটু সম্পর্ক হল না। অবশ্য এর জন্য আমার কোন আক্ষেপ নেই। আমার সেই ব্যাক্তিগত ঈশ্বরের যা চেহারা ছিল তা দেখে কেউ তাকে ঈশ্বর বলবে না।তার না ছিল কোনো বাহন, না অলংকার , অস্ত্র, তৃতয় নয়ন , এমনকী মাথার পেছনে কোনো উজ্জ্বল আলোর বৃত্ত। সে ছিল আলো বাতাস-আঁধার-জল-অভিমান মিশিয়ে বহুরূপী।সে যে চোরও ছিল তাও বেশ মনে আছে আমার। কতবার সে আমার বুকের মধ্যে সিঁদ কেটে কতকিছু নিয়ে গেছে। তার সঙ্গে আমার যত মনের কথা। তাকে চোখে না দেখা গেলেও কথাবার্তায় কোনো অসুবিধে হত না।

তাকেই জিঞ্জাসা করেছি , “আচ্ছা পিতামহ ভীষ্ম রাতে কেমন করে একলা থাকে?” ঈশ্বর বলত “বড় । খুব বড় হলে আর কোন ভয় থাকে না”

“বড় হলে ভয় থাকে না।“ কথাটা পুনরায় উচ্ছারণ করতে করতেই একটা যুক্তির কথা মাথায়  আসত ।আমি বলতাম ‘আমাদের এই তুলসীগাছটা তো এই একটু খানি;ওর তাহলে খুব ভয় করে রাতে?’ আমার যুক্তির কাছে হার মানত আমার ঈশ্বর ।হেরে গিয়ে, এমন করে, ঈশ্বর ছাড়া কেউ হাসতে পারে না যে, এ আমি এই দীর্ঘ জীবনে বহুবার দেখেছি। এখন আরও বেশি করে দেখি।“(অনুধ্যান—নারায়ণ মুখোপাধ্যায়)

একটা প্রমত্ত গোষ্টির ঈশ্বর আর শাস্ত্র যদি মানব সমাজ কে ধারন করতে না পারে তবে নিজেই নিজেকে ধ্বংস করবে। ইসলামিক জঙ্গীপনা দেখে রেজা আসলানের মত মানুষরা দিনে দিনে মুষড়ে পড়লেও কোন মানবসমাজ দীর্ঘ দিন ধরে চলতে থাকা খুন,  বিশেষ করে নিরাপরাধ ও অস্ত্রহীন মানুষকে খুন করা  চলতে দেবে না—তা ইসরায়েলের নারকীয় বোমাবাজী কি শ্রীলঙ্কা সরকারের জেনোসাইড বা তালিবানীদের নির্বিচারে হত্যা যাই হোক না কেন। হিটলার আমিত্ব্বের গর্বে, মিথ্যে ও ক্ষুদ্র জাতীয়তার গর্বে নিজেকেই ইতিহাস থেকে মুছে ফেলেছেন। ক্রিকেট খেলায় হেরে গিয়ে, ধরেই নিই যদি তাদের বিরুদ্ধে  পক্ষপাত করা হয়েছে, যদি জাতিয়তাবাদের ক্ষুদ্র পাঁকে স্নান করতে করতে, ইসলামিক মৌলাবাদের দাঁত-নোখ বের করে ফেলে, তবে বাংলাদেশকে তার জন্য চরম মুল্য দিতে হবে। সে আবার সৌদি-পাকিস্তানের হাতে বন্দি হবে।

আমরা তো শত শত বছর  ধরে একে অপরের ঈশ্বর বা আল্লা নয় শুধু, ব্রহ্মদত্যি ও মামদো ভুত নিয়েও পাশাপাশি ছিলাম। “ভুতপ্রেতরাও যেন আমাদের গ্রামের ভুতপ্রেত। তারা কোন অলক্ষে থেকে আমাদের জীবনযাত্রা দেখত। আমাদের যেন কতই পরিচিত ছিল তারা। দেশবিভাগ হলে আমরা যে চলে এলাম। তাদের কোথায় ফেলে এলাম, একবার ভাবলাম। এখন আমার খুব মনে হয়---বড় করে যা হারাই আমরা তার সঙ্গে আরও আরও গহন কিছু হারাই। তারা দেখতে ছোট, তবে প্রকারে ছোট নয়।“(অনুধ্যান—নারায়ণ মুখোপাধ্যায়)।

লক্ষকোটি অতি সাধারন জনগণ , নিম্নবর্গীয় মানুষ ও তাদের তথাকথিত “নিচুস্তরের” ধর্ম বিশ্বাস ও কুসংস্কারের জীবনেও নিজের বিশ্বাসের কারনে অন্যকে মারতে উস্কানী দেয় নি, তাদেরকে শহর থেকে লোক গিয়ে কিছু না শেখালেও চলবে। এমকি সেকুল্যারিসম না শেখালেও চলবে। কারন এই আধুনিক ধারনটা ইউরোপের নিজেরদের ধর্মের বিভিন্ন গোষ্ঠির মধ্যে চলা অন্তরবিরোধ সামলাতে না পারার ফলশ্রুতি হিসেবে গড়ে ওঠে। কিন্তু ভারত, কি সামগ্রিক দক্ষিন এশিয়ায় তার দরকার পড়ে নি। এই উপমহাদেশে  নানা গৌন ধর্ম, বাউল-ফকির-সুফিবাদ, সেলিম চিস্তি , কবির, আব্দুল করিম খাঁ, হাসান রাজা, লালন, বিজয় সরকার,মুকুন্দ দাস, ওস্তাদ আলাউদ্দিন  আরও আরোও নাম না জানা বিশ্বাসী মানষের মিলন মেলা ছিলই ।রবি শংকর প্রকৃত অর্থেই বাবা ডেকেছিলেন ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁকে, তেমনই নিরক্ষর হতদরিদ্র বিখ্যাত  কোলাজ শিল্পী সাকিলা বাবা বলে যাকে পেয়েছিলেন তিনি হিন্দু পাঞ্জাবি বিখ্যাত চিত্রশিল্পী বলদেব রাজ পানেসর।  এই আত্মিকতা যুগ যুগ ধরেই ছিল ।অজানা অতিথিকে জল-বাতাসায় আপ্যায়নের ধারাটা বৃটিশ যুগে এসে ক্ষীন হতে শুরু করে। এর মানে এই নয় আমি সেকুল্যারিসম এর বিরোধীতা করছি। বলতে চাইছে এই সুমহান দেশে এই ধরনের আইডিয়া যতটা শহুরে মানুষের দরকার ততটাই গ্রামের সাধারণ  মানুষের কাছে গুরুত্বহীন কারণ এর থেকে আনেক বেশি সহনশীল জীবন তারা বংশপরম্পরায় পালন করে এসেছে। তাঁদের সেই বালকের বিষ্ময়ের মতো সরল জীবনটা উন্নয়নের মিথ্যে বুলি দিয়ে ও বুলড্রেজার না চালালে ও তাঁদের প্রকৃতি প্রেমকে সম্মান করলে অসহিষ্ণুতার বাতাবরন আপনা থেকে কমবে।সত্যিকারের জীবনে মানুষ পালন করে  এসেছে যে  দেশজ শিক্ষা তাকে সম্মান না করলে নিছক “inferior believes” আর  “superstitious believes”  বলে নাক-শিঁটকালে মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াইতে আমরা হারবো।
                                                      

ধর্মীয় মৌলবাদের বিষ অনেকটাই রাজনৈতিক । রাষ্ট্রের নানা ফন্দির কারণে জিগির তোলা হয়, যেমন উপজাতিরা দেব-জ্ঞানে   যে জঙ্গল ও পাহাড়কে বুক দিয়ে আগলে রাখে ও সম্পদকে সঞ্চয় করে তাকে মাইনিং কোম্পানীরা রাষ্টের সহায়তায় গুঁড়িয়ে দিতে চায় আর পরিবর্তে সেই পাহারের শানুদেশে বানিয়ে দিতে চায় শ্বেত-পাথরের আধুনিক ধাঁচার মন্দির। ওড়িশার কোন্দ উপজাতিরা এমন অশ্লীল-প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রের বিরাগভোজন হয়েছে।

আমি এই আধুনিক সমাজের , যুক্তিবাদী সমাজের মানুষ। আমার কোন ফুল-বেলপাতার , পরীক্ষা পাশের বা চাকরির উমেদারী করার ঈশ্বর নেই। আমি জানিই না তাঁর স্বরূপ ।কিন্তু নানা সংশয়ে কাটে জীবন। এতদিন ধরে যে গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক ও আধুনিক শিক্ষার পরিমন্ডলে বড় হয়েছি সেখানে ডলার ফর ডলার সব কিছুতেই। এটাই স্বাভাবিক ভেবেছি। পরে দেখেছি বাউল গান যারা গায়ে তারা বেশিরভাগই পারফর্মার , আসল বাউল জীবন যারা কাটায় তাঁরা নিঃস্ব কিন্তু রিক্ত নয়। সেই বাউলরা খুব একটা স্টেজ পায় না। আমাদের দেশে দেশে, কালে কালে বিনা-সুতার যে সম্পর্ক তাকেই যদি ছিঁড়ে দিই তবে কোথায় আর যুক্তিবাদের যুক্তি ধোঁপে টেকে? রবীন্দ্রনাথ “লোকহিত” প্রবন্ধে  উচ্চবিত্ত হিন্দু স্বরাজ-নেতাদের ছুত-মার্গ দেখে এমনটাই কী লেখেননি? আবার আশিষ নন্দীর কথায় ফিরি” I have been guided by Gandhi's maxim that those who think that religion has nothing to do with politics understand neither religion nor politics. I leave it to the next generation of South Asians living in South Asia to judge if it has been all a waste of time.” মৌলবাদকে চুর্ণ করতে গেলে আমাদের স্বাভাবিক দেশজ পদ্ধতিতে ফিরতে  হবে। তাদের জল-জমি-জঙ্গল থেকে উন্নয়নের নামে উৎখাত না করে, তাদের লোকায়াত বিশ্বাস আর ভুত-প্রেত পোকা-মাকড়ের ছোট জীবনকে সম্মান না করে যদি অচলায়তন শাস্ত্রের সঙ্গে মানুষগুলোকেো একধাক্কায় জলে ফেলে দিই আর  হারে রে রে করে যদি সব শ্রেনীর ধর্ম-বিশ্বাসে মিশ্রিত জীবনকে শহুরে উন্নাসিকতায় এক ধাক্কায় কুসংস্কার থেকে টেনে বের করে আনার শৌখিন মজদুরি করি তবে তা চারু মজুমদারের নির্বিচারে শ্রেনীশত্রু খতম করার ব্যার্থ আন্দোলনের পরিণতি পাবে।

গত চল্লিশ বছর ধরে যখন আমাদের আগুনখোর বিল্পবীরা সংসদ ও সংসদের বাইরে রাজনৈতিক তরজায় মেতেছে, কখনো এর হাত কখনও ওর হাত ধরে ক্ষমতার কাছাকাছিই থাকতে চেয়েছে তখন সারা ভারতবর্ষ জুড়ে আর এস এস আর বিশ্বহিন্দুপরিশদ ইস্কুল কলেজ বানিয়ে ধীরে ধীরে হিন্দু-মৌলবাদ ও বানিয়া-নিয়ন্ত্রিত হিন্দু জাগরণের বিষ সূক্ষভাবে ছড়িয়ে দিয়েছে লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়েদের মধ্যে। আজকের নরেন্দ্র মোদীর উত্থানের পিছনে যে মিথ্যা উন্নয়নের ফানুস ওড়ানো হয়েছে তাতে সেইসব ছেলেমেয়েদের এক গরিষ্ঠ অংশ ভোটার হিসেবে যোগদান করেছে এবং এর জন্য তাদের কোন মনোবিকার নেই কারন তাদের মনটাই দুটো প্রজন্মজুরে উচ্চ-বর্ন শাসিত হিন্দুমৌলবাদে জারিত হয়ে গেছে। ভারতের অর্থনীতির চালকদের একটা বড় অংশ এটাই অনেকদিন ধরে চেয়েছিল তাই আম্বানী-আদানী-সুনীল মিত্তাল-বাজাজ-বিড়লা-বেদান্ত  মিলিত শক্তি, যখন আগের দুটো ইউপি এর সরকারকে পুরোটা কব্জা করতে পারেনি নানান কারনে তখন তাদের আউট এন্ড আউট খেলতে মঞ্চে দরকার ছিল একজন পাকা অভিনেতা ও মিমিক্রি শিল্পির যে দেশভক্তির চড়া সুরে হিন্দু মৌলবাদের মুখর দিকটা লক্ষ-কোটি নিরন্ন মানুষকে দেখাবে চতুরতার সঙ্গে, যিনি ৩২% ভোট পেয়েও এমন ভাব দেখাতে পারবেন যে সমগ্র ভারতের আত্মার প্রতিভূ তিনি। লক্ষ করা দরকার গুজারটের সফল দাঙ্গার বলি হয়েছিল মুলত শহুরে ব্যাবসায়ী মুসলিম সমাজ যাতে হিন্দু বানিয়ারা নিজেদের বাড়িয়ে নিতে পারে। গত লোকসভা ভোটের আগেও উত্তরপ্রদেশে মাটি আঁকড়ে বসেছিলেন গুজারাটের দাঙ্গার মুল কারিগর অমিত সাহ, এবং উত্তর প্রদেশে লোকসভা ভোটের আগে অনেক আঞ্চলিক ক্ষুদ্র সাম্রদায়ি ক টেনশন তৈরী করা হয়েছিল যাতে দলিত, মুসলিম হিন্দু ভোট বিজেপি ছারা অন্য পকেটগুলোতে ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে যায় এবং দরকারী সংখ্যাটা নিশ্চিত হয়। স্বচ্ছভারত অভিযানের প্রকান্ড বিঞ্জাপন দিয়ে গান্ধিজীকে ঢেকে ফেলা হয় ২রা অক্টোবর। যে দেশে গরীব নিবারনের কোন স্বচ্ছ কার্যক্রম নেওয়া হয়না, সাস্থ্য বাজেট থেকে নয়া সরকার ৬০০০ কোটি টাকা চুপিচুপি কমিয়ে দেয় সেখানে চাইলেও কি গরীবের ঘরের নোংরা দূর করা যাবে শহুরে সেলিব্রিটিদের হাতে ঝাঁটা ধরিয়ে? সরকারী কোষাগারের অনেক টাকা যদিও সাফা করা যায়।  ভোটের আগে যেমন কট্টর হিন্দু-গরিমার মুর্ত প্রতীক বল্লভভাই প্যাটেল এর বিকট আকারের মুর্তি উন্মোচন করে একটা বার্তা দেওয়া হয় , ভোটের পর তেমনই নাথুরাম গডসের মন্দিরও স্থাপিত হয়েছে। এ লজ্জা আমাদের সবার।
                                                       

 মৌলবাদের বিরুদ্ধতা করতে হবে বলে  , ধর্ম বিশ্বাস বা ইশ্বর ধারনার হাজার হাজার বছরের সমস্তকে নিছক অপ্রমানিত তাই মিথ্যে , যুক্তিবাদীদের এই গোয়ার্তুমিও আসলে অন্য গোত্রের মৌলবাদী ধারনা ।সৃষ্টির মাত্র ৪% বিঞ্জানের অধীত ঞ্জান দিয়ে জানতে পারা গেছে। বাকি টুকু ? আমাদের রোজকারের জীবন তো মুলত ইন্দ্রীয়গ্রাহ্য অনুভবের , তবে উপলব্ধীর যায়গা কোথায়? তবে শিল্পের যায়গা কোথায়? রবীঠাকুরের গানকে কিভাবে কোন frame of reference  এ রাখবো?   সভ্যতার সামগ্রিক দানকে অস্বীকার করে নিছক ভোগবাদী চেতনায় মৌলবাদী হিংসার থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে না। আসলে যুক্তিবাদীরা নিজেদের যতই মানবতাবাদী বলুক,  একটা frame of reference  তৈরী করে তাতে আটকে পড়ছে।তারা বলছে তথাকথিত সমস্ত ধর্ম ও বিশ্বাস কেবল নিয়তিবাদ বা অদৃষ্টবাদকেই প্রশয় দেয় তাই মানুষ ধর্মের দাসে পরিনত হয়ে পড়ে এবং বিঞ্জান ও প্রযুক্তি নির্ভর প্রমানিত ও ইন্দ্রীয়নির্ভর অভিঞ্জতাসঞ্জাত যা কিছু তার বাইরের সবই ত্যাজ্য।যুক্তিবাদীরা ধর্মের ও বিশ্বাস নির্ভর যাপনের প্রথম অংশটা নিয়েই বলে চলেছেন।সেক্ষেত্রে তাঁদের অভিনিবেশ অনেকটাই ঠিক,  তাতো আর্জেন্টিনার নাগরিক  বর্তমান পোপের  ভ্যাটিক্যানের হাঁসফাস করা জীবন ও সেই প্রেক্ষিতে করা কিছু মন্তব্য থেকেই বোঝা যায়, প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের সর্বোচ্চ গুরুই যদি এমনটা বোধ করেন তবে সাধারন মানুষের অবস্থা কতটা করুন।সেই সুযোগটা নিয়েই আশ্রমবাবারা কু-কীর্তির পাহারে বসেন।

এখন্ যুক্তিবাদের বাইরে যা কিছু ধারনাতা তাদের গড়ে তোলা নিজেদের  কেরিয়ার ও frame of reference কে কিছুমাত্র প্রশ্ন করলে তারাও যুক্তি ও পারম্পর্যহীন কথা বলেন।রসবোধ না থাকলে প্রেমের দ্বারা অন্যকে জয়ের ইচ্ছা না থাকলে যা হয় তা শেষমেষ ক্রুশেড। ফরাসী পত্রিকার কার্টুনিস্তকে  হত্যা চূড়ান্ত নিন্দনীয় ও ঘৃন্য ইসলামিক মৌলবাদী হামলা কিন্তু পত্রিকাও কি দিনের পর দিন শালীনতার সীমা লঙ্ঘন করেনি? গৌতম বুদ্ধের অনেক মুর্তি আছে, যিশুর কিছু কাল্পনিক ছবি আছে , কিন্তু মুসলিম একেশ্বরবাদী ধারনায় মুহম্মদের কোন ছবি যখন নেই তখন তা বানিয়ে কেন অন্যকে অযাচিত আঘাত করা হবে? সে অধিকার কে  দিয়েছে? আমি যদি আমার বাবার ছবি বাড়ি্তে  না টানাই তবে পড়শির কি এসে যায়? অনেক হিন্দুই শনিবার নিরামিষ খান।তা তদের ব্যাক্তিগত অভিরুচি আমি কেন প্রতিবাদ করব কিন্তু এটা যদি সামাজিক বিধান হয়  ও আমাকেও শনিবার নিরামিষ খেতে বাধ্য করা হয় তবে তা মৌলবাদী ফতেয়া এবং নিন্দনীয়। যেমন বামপন্থীরা যখন মুষ্টি  বদ্ধ করেন  সেটাও একধরনের ritual. সেটাও সামাজিক বিধান হলে মানব না।


মানুষতো নানা সম্ভাবনায় বাঁচে। তার একটা দিক যেমন প্রতিদিনের জীবনযুদ্ধ ও রোজগারের দিক তেমন অন্যদিকে চিরায়ত মৃত্যুচিন্তা, বিষ্ময়বোধ ও উন্মোচনের ইচ্ছা। অস্তিবাদী দৃষ্টিকোন এমন কিছু বাস্তবতার সম্ভবনা সৃজন করে যা তার অনন্য সম্ভবনা মৃত্যুকে লুকিয়ে রাখে। মৃত্যু অস্তিত্বকে তার সম্পুর্নতা ও অনন্যতা প্রদান করেছে। মৃত্যু ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যকে নির্ধারণ  করে এবং সক্ষম করে তোলে যাতে সে নিজেকে স্বাধীনভাবে বেছে নেওয়ার সম্ভাবনাগুলোর মধ্যে নিয়োজিত করতে পারে।

যেকোন ধরনের মৌলবাদ এই সম্ভাবনাগুলোকে নস্যাৎ করে একমুখীন নীরস ও কঠোর ফতেয়া বা বিধান নির্ভরকে সাধারন মানুষের মধ্যে চাপিয়ে দিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে।তাই Radical Spirituality যেমন  বাউল ফকির ভিন্ন ভিন্ন ধরনের সংগঠীত ধর্মের বিরুদ্ধে যে আন্দলনগুলো, আমাদের তার থেকে গভীরভাবে শিক্ষা নেওয়া দরকার। এইখানে পারম্পরিক যুক্তিবাদ ও বামপন্থা বা বা্মপন্থীধারার শূন্যতা , ব্যাথর্তা বা অন্ধতা----তারা আমাদের দেশের সংগঠীত ধর্মের  বিরুদ্ধে যে Radical Spirituality র যে ধারা আছে সে ব্যাপারে অন্ধ। আমরা সংগঠীত ধর্মের প্রতিবাদ কি করে করব? তাতো Victorian Materialist..world বা Victorian যুগের Scientific  achievement দিয়ে হবেনা। এটার যে অনেক গভীর দিকগুলো আছে সেগুলোতো আমরা দেখতেই শিখিনি। সেখানটাতে  আমাদের মনের অর্গল খুলতে হবে। আমাদের সামনে  অনেক অনেক  দরজা খুলতে হবে।
“অশ্বত্থশিকড়ে বসে একটা হাটুরে লোক ডাব কিনে খায়;
ভাঙাহাটে বেলাশেষে লক্ষ করে মানুষের চলাচল গতি---
ক্রমশ দিঘির পাড়ে নারিকেল বৃক্ষ দেখে আনমনে কিছুক্ষন ভাবে
তারপর হেসে বলে, কান্ড দ্যাখো! মালিকের খোশবাগে
টুলু পাম্প নেই! তবু অত উঁচু গাছের ওপরে কচিডাবে
কী ভাবে উঠছে পানি? আল্লা জানে! আর এই নেয়াপাতি ডাবের মালায়
কেমন নরম রুটি, মিঠেশাঁস মুখে নিতে কী আনন্দ লাগে---
এ জিনিস কে বানবে ? এ বড় আজব কলে শক্ত কেরামতি!
শাঁসেজলে এত মধু চুপি চুপি কে ঢেলেছে বেহেস্তের ভালবাসা দিয়ে?
দ্যাখো তার বুদ্ধি কত---হিজিবিজি কী কৌশলে দুনিয়া চালায়---
সন্দেহপ্রবন এক শ্রোতা ছিল---সবিস্ময়ে এদিকে তাকিয়ে
সে এবার প্রশ্ন করে---আচ্ছা মামু, তুমি কি বৈরাগী হয়ে যাবে?
ডাব খেয়ে উঠে এসে লোকটা ধরেছে তাকে , কবেকার তিন টাকা পায়
সেই নিয়ে তর্ক বাধে, আল্লা-খোদা আপাতত দূরে চলে যায়।(ডাবের হাটে লোকটা—শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়)

[জয়ন্ত ঘোষাল]





Comments
0 Comments

No comments:

Blogger Widgets
Powered by Blogger.