>

রীতা রায় মিঠু





সংশপ্তক: অধিকাংশ বাঙালিরই রবীন্দ্রনাথের সাথে প্রথম পরিচয় সহজ পাঠের পাতায়! তারপর সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে তাঁর সাথে প্রথম আলাপ যার যার নিজস্ব পরিসরে এক এক রকম ভাবে গড়ে ওঠে আপনার ক্ষেত্রে সেই প্রথম আলাপ গড়ে ওঠার গল্পটা যদি একটু বলেন আমাদের!
রীতা রায় মিঠু:  আমার স্মৃতিশক্তি বরাবরই বেশ স্বচ্ছ ছোটবেলার স্মৃতির নির্দিষ্ট কোন বয়স থাকে কিনা জানিনা, তবে হিসেব করে দেখেছি, তখন আমার বয়স ছিল বড়জোর তিন বা চার আমরা থাকতাম ঢাকার অদূরেই নারায়ণগঞ্জ শহরে শহর বলতে এখন যেরকম ইঁট কাঠ সিমেন্টের দালানের গাদাগাদি মনে হয়, আমার ছোটবেলার শহর তেমন ছিল না আমরা বাস করতাম কাঠ আর টিনে ঘের দিয়ে বানানো ঘরে ঘরগুলো ছিল একেবারে শীতলক্ষ্যা নদীর তীর ঘেঁষে বারান্দায় বসলেই শীতলক্ষ্যাকে হাতের নাগালে পাওয়া যেত আমার মেজদা বয়সে আমার চেয়ে তিন বছরের বড়, স্বভাবে খুবই চঞ্চল হলেও মুখস্থ বিদ্যা সেই ছোটবেলাতেই প্রখর ছিল শীতলক্ষ্যা নদীর দিকে তাকিয়ে মেজদা যে কবিতার চরণ মুখস্থ বলতো, সেগুলো ছিল, আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে---- পার হয়ে যায় গরু----- চিকচিক করে বালি কোথা নেই কাদা, দুই ধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা! মেজদা বলতো আর আমি কল্পনায় এঁকে ফেলতাম হুবহু দৃশ্য, সবই মিলতো, কেবল কাশ বন বাদে

আমাদের কাঠের ঘরের দেয়ালে শোভা পেতো সকল মনীষীদের ছবি তাদের একজন ছিলেন আমাদের দাদু, বিশাল পা ঢাকা লম্বা জামা, মাথায় সাদা চুল, বুক পর্যন্ত সাদা লম্বা দাড়ি, দুই হাত পেছনে দিয়ে দাঁড়ানো আমি আর আমার ছোট ভাই বুড়ো মানুষটিকে দাদু ডাকতাম একদিন মেজদা জানালো, ছবির দাদুই নাকি আমাদের ছোট নদী লিখেছেন

সেই থেকে দাদুর নতুন পরিচয় জানলাম, নাম জানলাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক বিকেলে বৃষ্টি হচ্ছিল, মেজদা বলল, এমন বৃষ্টি দেখেই নাকি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, জল পড়ে পাতা নড়ে এবং এটিই রবির প্রথম কবিতার চরণ পাশের বাড়ির পাঁচু কাকা দুধে আমসত্ব ভিজিয়ে খাচ্ছেন, আমাকে দেখে বলেছিলেন, আমসত্ব দুধে ফেলি, তাহাতে কদলী দলি- জানলাম, এটিও দাদুর কবিতা এই কবিতার চরণ শোনার পর থেকে আমার মনে একটা সুপ্ত লোভ জেগে উঠতো, আমসত্ব দুধে মিশিয়ে খাওয়ার লোভ কিন্তু কোনদিন খাওয়া হয়নি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই ছবির দিকে তাকিয়ে ভাবতাম, ইস! এই দাদুটা আমসত্ব দিয়ে দুধ খেয়েছে, না জানি কত মজা খেতে! ছোটকালের আমার সাথে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এটুকুই পরিচয় ছিল

সংশপ্তক:   একটু গভীর ভাবে দেখলে আমরা দেখতে পাই, আমাদের যার যার জীবনে শৈশবের রবীন্দ্রনাথ কৈশরের রবীন্দ্রনাথ যৌবনের রবীন্দ্রনাথ আসলেই ক্রমশ প্রকাশ্য রবীন্দ্রনাথের একটা ধারাবাহিক পর্বই! আমরা যার জন্যে ঠিক প্রস্তুত থাকি না, অথচ এই ধারাবাহিক ভাবেই কবি যেন আমাদেরকেই প্রস্তুত করে তোলেন আমাদের জীবনের পূর্ণ উদ্বোধনের জন্যেই! আপনার ব্যক্তি জীবনের গড়ে ওঠার পর্বে রবীন্দ্রনাথ কিভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন সেই গল্পটা যদি বলেন
রীতা রায় মিঠু:   আমি ছোটবেলা থেকেই স্পষ্ট করে কথা বলি, এখনও তা বলি বলতে এতটুকু সংকোচ নেই, কৈশোরে স্কুলের পাঠ্য বইয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা গল্প, কবিতার বাইরে আমার তেমন কিছু পড়া হয়নি কেন হয়নি জানিনা, ঘরে একটিমাত্র সম্পত্তি ছিল ট্র্যানজিস্টার, সেটাতে আকাশবাণী কলকাতা থেকে প্রচারিত রবীন্দ্রসঙ্গিত শুনে মনে হতো, কী ঝিমানো গান রে বাবা! এর চেয়ে তোঁ কিশোর কুমারের আধুনিক গানগুলো অনেক সুন্দর হয়তো কিশোরী মনের উচ্ছলতার কাছে রবীন্দ্র সঙ্গীতের ভাবের গভীরতা তেমনভাবে ধরা দেয়নি তবে হ্যাঁ, ছুটি গল্পের ফটিক অথবা কাবুলিওয়ালার কাবুলিওয়ালার জন্য সেই কিশোরীবেলায় বুকে যতখানি ধাক্কা পেয়েছি, এই মধ্যবয়সে পৌঁছেও ধাক্কার রেশ কাটেনি মধ্যবয়সে পৌঁছে অনুধাবন করতে পারছি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখার গভীরতা! নাহলে কাবুলিওয়ালার জন্য আজও কেন বুকে ব্যথা জাগে!

সংশপ্তক:  রবীন্দ্র-প্রতিভার ঠিক কোন দিকটি, আপনার যৌবনের পর্বে বেশি মাত্রায় আন্দোলিত করেছিল আপনাকে?
রীতা রায় মিঠু:   রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেম প্রত্যাশী হৃদয়াবেগ আমাকে যৌবনে যতখানি আন্দোলিত করেছিল, আজও আন্দোলিত করে

সংশপ্তক: এই যে জীবনের বিভিন্ন পর্যায় আমরা রবীন্দ্রনাথকে নিত্য নতুন নানা ভাবে আবিষ্কার করি, এই বিষয়টি আপনি কি ভাবে ব্যাখ্যা করবেন? আমাদের এই ধারাবাহিক ভাবে রবীন্দ্রমানস আবিস্কার আসলেই রবীন্দ্রনাথেরই সাথে পথ চলা নয় কি? না কি এই আবিস্কারের সাথে আমাদের নিজস্ব ব্যক্তিত্বের আত্মিক যোগ ততটা নেই যতটা মেধা ও বুদ্ধিবৃত্তির যোগ আছে?
রীতা রায় মিঠু:   প্রশ্নটির শেষ অংশে বলা যুক্তিটুকুই আমি সমর্থণ করি রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যের সর্বত্র মিশে আছেন ঠিকই, তারপরেও আমরা প্রত্যেকেই আলাদা একজন মানুষ যদিও আমাদের প্রত্যেকের কল্পনায় কেউ না কেউ আইডল হিসেবে চিত্রিত হয়, কল্পনার আইডলকে অনুকরণ করার চেষ্টাও করে থাকি, কিন্তু পুরোপুরি কারো মতো হয়ে উঠতে পারি কি? পারি না কারণ আমাদের প্রত্যেকের মনন ও চেতনায় আত্মমর্যাদাবোধ, অহংবোধ, অন্যের ব্যক্তিত্বের সামনে নত না হওয়ার অভিপ্রায়সব মিলিয়ে নিজের আলাদা ব্যক্তিত্ব তৈরী হয়ে যায়, যা দিয়ে প্রতিটি মানুষ সমাজে নিজেকে আলাদা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় আরেকটু স্পষ্টভাবে যদি বলি, রবীন্দ্রনাথকে জানতে গিয়ে, তাঁর অসাধারণ প্রতিভার দ্যুতি অনুসরণ এবং অনুকরণ করার মধ্য দিয়ে আমরা প্রত্যেকেই ছোট ছোট রবীন্দ্রনাথ হয়ে উঠার চেষ্টা করি, মেধা এবং প্রতিভার ব্যবধানের কারণেই দ্বিতীয় রবীন্দ্রনাথ হয়ে উঠতে পারি না

সংশপ্তক: রবীন্দ্রপ্রতিভার কোন দিকটি আপনাকে বেশি করে টানে ও কেন?
রীতা রায় মিঠু: প্রতিভার নির্দিষ্ট কোন দিক নয়, একজন সম্পূর্ণ রবীন্দ্রনাথ আমাকে সম্পূর্ণভাবে টানে, কারণ আর কিছুই নয়, সৃষ্টিকর্মে রবীন্দ্রনাথের সম্পূর্ণতা!

সংশপ্তক: বর্তমানে আপনার ব্যক্তিগত জীবন যাপন ও সংস্কৃতি চর্চার পরিসরে রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতির চিত্রটির স্বরূপ ও বিকাশ সম্বন্ধে যদি কিছু বলেন
রীতা রায় মিঠু: আমার বর্তমান বয়স পঞ্চাশ, জীবন খাতার পাতাগুলো প্রায় পড়া হয়ে গেছে কিছু পাতা হয়তো বাকী আছে এখন আমার হারানোর সময়, মাতৃভূমি থেকে দূরে আছি, প্রিয়জন থেকে দূরে আছি, বয়স হারিয়েছি, যৌবন হারিয়েছি, প্রিয়জন হারিয়েছি এত কিছু হারিয়ে হৃদয়ে যখনই শোকতাপ প্রবল হয়ে উঠতে চায়, আমি রবীন্দ্রনাথকেই স্মরণ করি স্ত্রী, সন্তান, মন মানসীকে হারিয়েও উনি লিখেছেন, আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, তবুও দহন লাগে, তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবুও অনন্ত জাগে আমি নিজকে সংবরণ করি, জীবন খাতার অবশিষ্ট পাতাগুলো পড়ার জন্য মানসিকভাবে তৈরী হই

সংশপ্তক: আধুনিক বাঙালির সমাজ জীবনে রবীন্দ্রনাথের অপরিসীম প্রভাব সম্বন্ধে আমরা সবাই ওয়াকিবহাল, তবু তিনি যে সমাজ-ভাবনার দিশা দিয়ে গিয়েছিলেন আমাদের সমাজ আদৌ সেই পথে এগোয়নি তিনি জোর দিয়েছিলেন গ্রামীন অর্থনীতির স্বনির্ভরতার উপর তিনি চেয়েছিলেন ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির বিকল্প হিসেবে সমবায় প্রথার বিকাশ সাধন আমরা কবির সমাজ-ভাবনার এই দিকগুলিকে সর্বতোভাবে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করেছিএই বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?
রীতা রায় মিঠু:  আমি এই ব্যাপারে ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক কোন কথা বলতে চাই না শুধু এটুকু বলি, মনের খেদ থেকেই বলছি, রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে ওয়াকিবহালদের শতকরা ৯০ জনই রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য, সঙ্গীত প্রতিভার দিকটি নিয়েই মজে থাকে মন মানসিকতা, চিন্তা চেতনায় রবীন্দ্রনাথ যে কতবড় সমাজ বিজ্ঞানী ছিলেন, অর্থনীতিবিদ ছিলেন তা অনেকেই আমলে নিতে চায় না, এমনকি অনেকে রবীন্দ্রনাথের চিত্রকর্ম প্রতিভা সম্পর্কেও অবগত নয় কূপুমন্ডুকতা আমাদের জাতিগত বৈশিষ্ট্য, আবেগপ্রবণতাও আরেক বৈশিষ্ট্য আমরা জাতিগতভাবেই বাস্তবতাকে আড়াল করে আবেগের জানালায় চোখ রেখে দুনিয়া দেখতে ভালোবাসি বলেই সমাজ বিকাশের প্রয়োজনীয়তার দিকটি অবহেলিত রয়ে গেছে

সংশপ্তক: আরও একটি বিষয়কে কবি দ্ব্যার্থহীন ভাবে তুলে ধরেছিলেন, সে হল শিক্ষায় মাতৃভাষার গুরুত্ব! তিনি খুব সুস্পষ্ট করেই বলেছিলেন বারো বছর বয়স অব্দি শিশুদের শুধুমাত্র মাতৃভাষাতেই শিক্ষা দেওয়া উচিৎ অথচ আজকের দুই বাংলায় নার্সারি থেকেই স্বছ্বল পরিবারের শিশুদের ইংরেজী মাধ্যমের স্কুলগুলিতেই ভর্ত্তি করার জন্যে অভিভাবকরা আদাজল খেয়ে উঠে পড়ে লাগেন এই বিষয়ে আপনার অভিমত কি?
রীতা রায় মিঠু:  এই বিষয়ে আমার কথা পরিষ্কার মাতৃভাষার গুরুত্ব যে পিতামাতা অনুধাবন করেন না, উনাদের সন্তানরা পেশাগত জীবনে যতই সফলতা অর্জন করুক, সেই সাফল্যে সম্পূর্ণতা আসে না আমি দীর্ঘকাল প্রবাস জীবন যাপন করছি আমাদের তিন কন্যার প্রত্যেকে বাংলাভাষা-ভাষীদের সাথে স্পষ্ট বাংলায় কথা বলে আমার তিন কন্যাকে মাতৃভাষা শেখাতে আমাকে খুব বেশী বেগ পেতে হয়নি, মাতৃভাষার প্রতি আমার দায়বদ্ধতার কারণেই আমি কন্যাদের ঘরেই বাংলা চর্চা করিয়েছি প্রবাসে বাঙ্গালী বিবর্জিত রাজ্যে বসবাস করেও আমার তিনকন্যা বাংলা পড়তে ও লিখতে পারে, বাংলায় কথা বলতে পারে অনর্গল পেশাগত জীবনে ওরা যা কিছুই অর্জন করবে, তাতে ওরা সম্পূর্ণতার স্বাদ পাবে

সংশপ্তক: বর্তমান শতাব্দিতে বিশ্বায়ন নিয়ে আমরা সবাই বিপুল ভাবে উৎসাহিত, কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে বিশ্বের কোনে কোনে ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে আমাদের মধ্যে ততটা উৎসাহ নেই বলেই মনে হয় এই বিষয়ে আপনার অভিমত কি? কি ভাবে ও কারা এই বিষয়ে সঠিক দায়িত্ব নিতে পারে বলে মনে করেন আপনি?
রীতা রায় মিঠু: বিশ্বায়ন কথাটির মধ্যেই তো বিশাল ব্যাপকতা বিশ্বায়নের এই বিশালত্বের মাঝে রবীন্দ্রনাথকে এককভাবে পাওয়া যাবে না রবীন্দ্রনাথ বাঙ্গালীর গৌরব, বাঙ্গালী কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আজও গৌরব বোধ করে তবে বর্তমান এবং অতীতের মধ্যে অনেক ফারাক আজকের বর্তমানই কালকে অতীত হয়ে যায় অতীতগুলো পেছাতে পেছাতে ইতিহাস হয়ে যায় ইতিহাস মানে অতীত, ইতিহাস নতুন কিছু সৃষ্টি করে না, তবে নতুন সৃষ্টির পথ দেখিয়ে দেয় রবীন্দ্রনাথ তেমনই একজন ইতিহাস, স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাস রবীন্দ্রনাথ নুতন করে কিছু সৃষ্টি করবেন না, তবে উনার সৃষ্টকর্মের পথ ধরে আগামী প্রজন্ম নতুন কিছু সৃষ্টি করবে এইজন্যই হয়তোবা বিশ্বায়নের এই যুগে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে উৎসাহ কারো নজরে আসেনা, কিন্তু রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টকর্মগুলো নিয়ে নিরীক্ষামূলক কাজ করার উদ্দিপনা সর্বত্র দেখা যায়, বিশ্বায়নের যুগ বলেই হয়তোবা সুদূর প্রবাসে বসেও প্রতিটি তথ্য আমি জানতে পারছি

সংশপ্তক: আমাদের বাঙালি সমাজের তরুণতর প্রজন্মের কাছে রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা কি ক্রমহ্রাসমান? যদি তাই হয়, তবে তার মূলগত কারণ কি বলে আপনার মনে হয়?
রীতা রায় মিঠু: বাঙালি সমাজের তরুণতর প্রজন্মের কাছে রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা ক্রমহ্রাসমান কিনা আমার সঠিক ধারণা নেই বাংলায় যে কোন উৎসব-আনন্দে, অনুষ্ঠান আয়োজনে তো রবীন্দ্রনাথকে এখনও জাজ্বল্যমানই দেখি নববর্ষ, রবীন্দ্র জয়ন্তী, পাড়ার ফাংশান, পূজো পার্বন, বসন্ত উৎসব, পৌষ উৎসবে তো তারুণ্যকেই দেখতে পাই হ্যাঁ, আধুনিক বিশ্বায়নের যুগে, ইউ টিউবের যুগে, ফেসবুকের যুগে, অ্যানড্রয়েড/অ্যাপেলের যুগে আমরা যদি ভাবি, তরুণরা সব ফেলে রবীন্দ্রনাথ নিয়েই ব্যস্ত থাকবে, তাহলে তা হবে আমাদের চাওয়ার ভুল, পাওয়ায় ঘাটতি নয়

সংশপ্তক:  রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন ছোট আমি থেকে বড়ো আমি হয়ে ওঠার গুরুত্বের কথা, “আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া, বুকের মাঝে বিশ্বলোকের পাবি সাড়া”; তবু যেন আমরা ক্রমেই ছোট ছোট আমির দূর্ভেদ্যে খোলসের মধ্যেই ঢুকে যাচ্ছি ক্রমশ এই বিষয়টি আপনাকে কতটা আহত করে বা বিচলিত করে?
রীতা রায় মিঠু: ছোট ছোট আমির দূর্ভেদ্য খোলসের মধ্যে ঢুকে যাওয়ার প্রবণতা অবশ্যই আমাকে আহত করে, আশাহত করে, নিরুৎসাহিত করে তবুও বিশ্বাসে বুক বাঁধি এই মন্ত্রে, মানুষ আশা নিয়ে বাঁচে আমিও আশা জাগিয়ে রাখি অন্তরে, নিজেকে নিয়েই নিরন্তর চেষ্টা করি যেন খোলসের ভেতর সেঁধিয়ে না যাই আমাকে খুব কাছ থেকে যে দেখে, সেও হয়তো উৎসাহ পায় তাকে দেখে উৎসাহ পাবে তার আশেপাশে থাকা দুই একজন ক্ষুদ্র প্রয়াস, ক্ষুদ্র চেষ্টাগুলো জড়ো হয়ে হয়তো একসময় ছোট আমির খোলস ছেড়ে বড় বড় আমিতে রূপ নিবে, আমরাও তখন বিশ্বলোকের সাড়া পেতে শুরু করবো, যেমন ইশারা দিয়ে গেছেন কবিগুরু

সংশপ্তক: আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যতের বাংলায় রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা কতটুকু থাকবে বলে আপনি আশাবাদী?
রীতা রায় মিঠু: আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যত বাংলায় রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা বহমানই থাকবে, তবে তা পুরোপুরি পূর্ববর্তী প্রজন্মের ধারায় প্রবাহিত হবে কিনা, তা সময় বলে দিবে এ ব্যাপারে আমাদেরকেও আবেগের কঠিন খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে হবে রবীন্দ্রনাথের গান চিরাচরিত ঢঙেই গাইতে হবে, নিরীক্ষামূলকভাবে কোন কিছুই যোগ বিয়োগ করা যাবে না, এমন রিজিড হলে পরবর্তী প্রজন্ম উৎসাহ হারিয়ে ফেলতে পারে  ন্যানো টেকনোলোজির যুগে পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের চেয়ে যোজন মাইল এগিয়ে যাবে রবীন্দ্রনাথ নিজেই আধুনিক মনস্ক ছিলেন, কাজেই আমাদের উচিত হবে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে  আধুনিক রবীন্দ্রনাথকে পরিচয় করিয়ে দেয়া, তাহলেই রবীন্দ্রনাথ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বেঁচে থাকবেন

[রীতা রায় মিঠু: প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক]


Comments
0 Comments

No comments:

Blogger Widgets
Powered by Blogger.